রাত জাগার কুফল কী?
রাত জাগার কুফল
রাত জাগা ভালো, না খারাপ?
আপনি কি রাত জাগেন? প্রশ্ন শুনে হয়তো হাসছেন? শহরের মানুষ রাত জাগবে না, তাও কি হয়? কথাটা ঠিক। কিন্তু এই ঠিক কথার পরিণতি কি জানেন? আসুন জেনে নিই, রাত জাগার কুফল বা পরিণতি কী?
সম্প্রতি গদি প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান স্লিপ স্কোরবোর্ড ২০২৫’ নামে একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন। এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে একটি ভয়ংকর তথ্য। এই তথ্য বলছে, ভারতের ৫৮ শতাংশ মানুষই রাত ১১ টার আগে ঘুমাতে যান না। আর কলকাতায় এই মানুষের অনুপাত প্রায় ৭৩ শতাংশ।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, রাত না জাগা, অধিকাংশ মানুষই তা মেনে চলছেন না। এটা আসলে একটা বদ-অভ্যাস। বর্তমান সময়ে, মোবাইল ফোন এই বদভ্যাসকে বিপদজনক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।
রাতজাগা সংক্রান্ত সমস্যা :
রাত জাগা বা দেরিতে ঘুমাতে যাওয়ার বদভ্যাসের কারণে মানুষের মধ্যে বিপদজনক শারীরিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যেমন,
- সমস্ত দিন জুড়ে ক্লান্তি ভাব অনুভূত হওয়া
- গা ম্যাজ ম্যাজ করা
- সমস্ত দিন ধরে চোখে ঘুম ঘুম ভাব লেগে থাকা
- একগুচ্ছ বিপাকক্রিয়াজনিত শারীরিক সমস্যা, যেমন হজমের সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদির কবলে পড়া।
- স্লিপ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ সৌরভ দাস এর মতে, দেরিতে ঘুমোতে যাওয়ার কারণে শুধু ক্লান্তি ও মনোযোগেই ব্যাঘাত ঘটে তা না। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, অ্যাংজাইটি —এই সমস্ত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় মারাত্মকভাবে।
- অস্টিয়োপোরোসিসের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
এই সমীক্ষায় আরও বলা হচ্ছে, দেরিতে ঘুমোতে যাওয়ার কারণে
- প্রায় ৪৪ শতাংশ লোক ঘুম থেকে দেরি করে উঠছেন। কিন্তু ঘুম শেষে শরীরের মধ্যে যে চনমনে অনুভূতি হওয়ার কথা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
- প্রায় ৫৯% জন মানুষ সারাদিন ধরে ঝিমুতে থাকেন। সঙ্গে থাকে ক্লান্তি। ফলে সারাদিনের কাজে এর মারাত্মক কুপ্রভাব পড়ে।
দেরিতে ঘুমাতে যাওয়ার কারণ :
দেরিতে ঘুমাতে যাওয়ার কারণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়েছে মোবাইল ঘাটাঘাটিকে। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ঘুমোতে যাওয়ার আগে কেউ চ্যাটে ব্যস্ত থাকছেন, কেউ নেটে সার্ফিং করছেন, কেউ গেম খেলছেন, কেউ ওটিটিতে সিনেমা বা সিরিয়াল দেখছেন। এছাড়া টিভি, ট্যাব এবং ল্যাপটপে সক্রিয় থাকারও ভুরি ভুরি উদাহরণ উঠে এসেছে।
এই মোবাইল কীভাবে ক্ষতি করে?
- ফুসফুস তথা ঘুম বিশেষজ্ঞ অরূপ হালদার বলছেন, ‘এইসব ডিভাইসের স্ক্রীন থেকে যে নীল আলো বেরোয় তা ঘুমের জন্য সহায়ক মেলাটোনিনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। ফলে, দেরিতে ঘুম আসে এবং গভীর ঘুম হয় না।’
- কলকাতার একটি স্লিপ ল্যাবের কর্ণধার সোমনাথ মাইতির মতে, ব্রেনের ইইজি করলে আমরা বুঝতে পারি যে, টানা এই বদভ্যাসের জেরে মস্তিষ্কের জৈব ঘড়ি নিজেই বুঝে উঠতে পারে না, কখন ঘুমানো উচিত।
- একটা সময় এই বদ অভ্যাস রোগে পরিণত হয়। অর্থাৎ রাত্রে ঘুমের ওষুধ না খেলে আর ঘুম আসতে চায়না।
ঘুম সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের উপায়:
এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ঘুম বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন —
- ঘুমোতে যাওয়ার এক দু ঘন্টা আগেই মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ কিংবা টিভি দেখা বন্ধ করে দিতে হবে।
- রাত দশটার মধ্যে ঘুমোতে যেতে হবে
- অন্তত সাত ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমানো নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
- মনে রাখতে হবে যে, রাতটা ঘুমানোর জন্য প্রকৃতি নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছে।
- এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন