ঘুমের সঙ্গে অস্টিয়োপোরোসিসের সম্পর্ক :
ঘুমের সঙ্গে অস্টিয়োপোরোসিসের সম্পর্ক :
ঘুমের আমি, ঘুমের তুমি, ঘুম দিয়ে যায় চেনা
ভাবছেন হয়তো সুকুমার রায়ের গোঁফ চুরি ছড়াটা ভুল করে উদ্ধৃত করছি। মোটেও তা নয়। জেনে বুঝেই সুকুমারকে অনুকরণ করছি। আসলে ঘুমের সঙ্গে শরীর ও মনের সম্পর্ক খুবই গভীর। একে উপেক্ষা করলেই আপনাকে ভবিষ্যতে ভুগতে হবে। কেন?
২৪ ঘণ্টায় কতক্ষণ ঘুমোন, সেটা বড় কথা নয়। দেখতে হবে রোজ রাতে আপনার ভালো ঘুম হয় কি না। মানে, রাত ১টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যেকার সময়ে কি আপনি অন্তত সাত ঘণ্টা শান্তিতে ঘুমান। উত্তর যদি 'না' হয়, তা হলে ভবিষ্যতে হাড়ে হাড়ে বুঝবেন সমস্যাটা। আক্ষরিক অর্থেই দ্রুত হাড় ক্ষয়ে গিয়ে অস্টিয়োপোরোসিসের কবলে পড়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আগেই হাড়গোড় ভঙ্গুর হয়ে উঠতে পারে আপনার।
ইউএসএ-র কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, পর্যাপ্ত ঘুম অস্টিয়োপোরোসিসের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। আর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সেই আশঙ্কা বেড়ে যায়। প্রশ্ন হলো অস্টিয়োপোরোসিস কী?
অস্টিয়োপোরোসিস কী?
অস্টিয়োপোরোসিস হল, এমন একটি অসুখ, যাতে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ক্ষয়ে গিয়ে হাড় ফুটো- ফুটো হয়ে যায়। ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। অল্প আঘাতেই হাড় ফ্র্যাকচার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। অন্যদিকে ভাঙা হাড় জোড়া লাগতেও গুরুতর সমস্যা হয়।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের এধ্যোক্রিনোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সোয়ান শন জানাচ্ছেন, অস্টিয়োপোরোসিসের অনেক রকম রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে। তার মধ্যে প্রধানতম হল বয়স বৃদ্ধি, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, জীবনশৈলীর ব্যাঘাত ইত্যাদি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, যাঁদের এই সব ঝুঁকি নেই, তাদেরও অল্টিয়োপোরোসিস হচ্ছে। তখনই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এর আরও কোন কারণের সম্ভাবনা রয়েছে।
এই কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়েই উঠে আসছে ঘুমের ভূমিকার কথা। ঠিক এই জায়গা থেকে সোয়ান শন অস্টিয়োপোরোসিসের নতুন ঝুঁকি হিসেবে কম ঘুমকে চিহ্নিত করছেন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০-৩০ বছর বয়সেই বোন-আস ডেনসিটি সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই এই বয়সে ঘুমের ঘাটতির অর্থ হল বৃদ্ধাবস্থার অনেক আগে, মাঝবয়সেই অস্টিরোপোরোসিসের শিকার হয়ে ওঠা একপ্রকার অনিবার্য। ফলে কম বয়সেই তাঁদের হাড় পলকা হয়ে যাওয়ায় ফ্র্যাকচারের আশঙ্কা বাড়ে। কেননা, অপয়াপ্ত ঘুম হাড়ের কোষ তৈরির ক্রমাগত প্রক্রিয়াটিকেই বাধাগ্রস্ত করে তোলে।
কীভাবে জানা গেল এই তথ্য। সাড়িতে আশ দেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের রাখা হয়েছিল এমন ইন্ডোর পরিবেশে, যেখানে ঘড়ির সময়ের আন্দাজ মেলে না। ঘড়িও ছিল না ভিতরে কোথাও। তারপর তাঁদের স্বাভাবিক জীবন বাঁচতে দেওয়া হয়েছিল নজরে রেখে।
আইস্ট
ঘুমের সময় ও সময়কাল পরিবর্তন করে এবং বোন-মেরু ডেনসিটি মেপেই গবেষকরা বুঝতে পারেন, কম ঘুম অস্টিয়োপোরোসিসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তাঁদের। কীভাবে এমনটা হচ্ছে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা। তাঁরা জানান, হাড় গঠনের সঙ্গে যুক্ত সেই সব জিন, যেগুলি, আবার শরীরের সাকাডিয়ান রিদম এবং ঘুম ও জেগে থাকার জৈবিক ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করে। কম ঘুম হলে রক্তে সেই সব রাসায়নিক 'মাকার' এর পরিমাণ বেড়ে যায় যেগুলি হাড় গঠন থামিয়ে দেওয়ার 'রেগুলেটর' হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়াটি রোজ চলে শরীরের জৈবিক ঘড়ির স্বাভাবিক চক্রের ছন্দে। তা যখন কম ঘুমের জন্য ব্যাহত হয়, তখনই থেমে যায় হাড় গঠনের প্রক্রিয়া। ফলে এমনটা লাগাতার চলতে থাকলে ধীরে ধীরে ভঙ্গুর হয়ে ওঠে হাড়।
ঘুম বিশেষজ্ঞরা আবার জানাচ্ছেন, কম ঘুম থেকে হাড় যেমন পলকা হয়ে ওঠে, তেমনই উল্ট্যোটাও একই রকম সত্যি। অর্থাৎ, ভিটামিন ‘ডি-৩’র ঘাটতির জন্য যাদের হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর, তাদের ঘুমও কম হয়। ফলে রোগীদের কম ঘুমের জন্য হাড় পলকা হয়, নাকি পলকা হাড়ই আদতে খারাপ ঘুমের জন্য দায়ী, তা বলা মুশকিল। স্লিপ স্পেশ্যালিস্ট অরূপ হালদার বলেন, 'ঘুমের জন্য সহায়ক যে রাসায়নিক, সেই মেলাটোনিন হরমোন তৈরির নেপথ্যে ভিটামিন ডি-৩-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই যাঁদের এই ভিটামিন কম, তাঁদের ঘুমও ভালো হয় না।'
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন