আই বি এস কী?

আই বি এস কী? কেন হয়?

What is IBS?
আই বি এস কী? কেন হয়?

‘আই বি এস’ কথাটির পূর্ণাঙ্গ রূপ হল ‘ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম’। নাম থেকেই বোঝা যায় যে, এটি এমন একটি সমস্যা যার মূলে রয়েছে পেট পরিষ্কার না হওয়ার কারণে উদ্ভূত অস্বস্তি। অর্থাৎ এটি একটি ক্রনিক পেটের সমস্যা বা রোগ।

তবে মনে রাখা দরকার এই রোগটি দুরারোগ্য হলেও তেমন জীবনঘাতী নয়। কিন্তু দীর্ঘদিন সমস্যাটি উপেক্ষা করলে প্রাণঘাতী (কোলন ক্যান্সার) হয়ে উঠতে পারে।

আইবিএস এর প্রকারভেদ :

এই অস্বস্তি মূলত চার রকম ভাবে দেখা দিতে পারে। 
  • কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় কষ্টকাঠিন্য অর্থাৎ পায়খানা শক্ত হয়ে যাওয়া। 
  • কারও ক্ষেত্রে ডায়রিয়া অর্থাৎ পাতলা পায়খানা হয়। 
  • কারও কারও ক্ষেত্রে এই দুটো উপসর্গই লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য, আবার কখনও ডায়রিয়া দেখা দেয়। 
  • চতুর্থ রকমটা একেবারেই অন্যরকম। ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য কোনটিই থাকে না, অথচ পেটের মধ্যে সব সময় অস্বস্তি এবং ব্যথা ব্যথা ভাব থাকে।

অর্থাৎ এই চার রকম উপসর্গের যেকোনো একটা আপনার মধ্যে লক্ষ্য করা গেলেই বুঝতে হবে আপনি সম্ভবত আইবিএস এ আক্রান্ত।

আইবিএস এর উপসর্গ :

আইবিএস এর উপসর্গগুলো খুবই পরিচিত। অধিকাংশ পেটের রোগের উপসর্গগুলোই মূলত একসঙ্গে দেখা দেয় আইবিএস-এর ক্ষেত্রে। যেমন, 
  • পেটের ব্যথা, 
  • পেট ফাঁপা, 
  • পেটে গ্যাস হওয়া,
  • বারবার পায়খানা পাওয়া,
  • পেট ঝেড়ে পায়খানা না হওয়া, এবং সর্বোপরি 
  • পেটের মধ্যে প্রচন্ড অস্বস্তি হওয়া। 

আই বি এস কেন হয়?

আইবিএস এমন একটি রোগ, যে বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনও গোলকধাদায় পড়ে আছে। অর্থাৎ এর কারণ সম্পর্কে কোন নির্দিষ্ট বিষয়কে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। এর কারণ, এক্ষেত্রে এক একজনের জন্য এক এক রকম বিষয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।

তবে গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসকরা কয়েকটি বিষয়ের সঙ্গে এই রোগের সম্পর্ক রয়েছে বলে নির্দিষ্ট করেছেন। এদের মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল :
  1. অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, 
  2. অতিরিক্ত রাত্রি জাগা, অর্থাৎ কম ঘুমানো
  3. অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও উত্তেজনা অনুভব করা, 
  4. এছাড়া জিন ও পরিবেশগত কারণও এই রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে চিকিৎসকরা লক্ষ্য করেছেন।

আইবিএস থেকে মুক্তির উপায় কী?

সবার আগে মনে রাখতে হবে, আইবিএস এর কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বিধি নেই। একেক জন রোগীর ক্ষেত্রে এক এক রকম ভাবে চিকিৎসকরা চিকিৎসার বিধান দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে কয়েকটি বিধি-বিধান আইবিএস নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকর বলে চিকিৎসকরা বলে থাকেন 
  • প্রথমত, এই রোগে ভোগা রোগীর জীবনশৈলীতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা দরকার। অর্থাৎ সময়মতো খাওয়া, ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। 
  • দ্বিতীয়তঃ মানসিক চাপ ও উত্তেজনা বাড়ে এমন বিষয় এড়িয়ে চলা। প্রয়োজনে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া ও তাদের পরামর্শ মত ওষুধ খাওয়া। 
  • তৃতীয়ত, নিয়মিত ব্যায়াম করা, প্রতিদিন হাঁটা চলার মধ্য দিয়ে শরীরকে সক্রিয় রাখা, এবং ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা। 
  • চতুর্থত, ঘুমানোর সময় চিৎ হয়ে কিম্বা বাঁ দিক ফিরে শুলে আইবিএস এর সমস্যা কিছুটা কমে বলে পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে।

আইবিএস ও খাদ্যাভ্যাস :

আইভিএস রোগীর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কোন বিধান দেওয়া যায় না। রোগীকে নিজেই লক্ষ্য করতে হয়, কোন কোন খাবারে তার বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে। যেসব খাবারে অসুবিধা হয়, সেগুলো কম খাওয়া কিছুটা সুফল এনে দেয়। সাধারণভাবে খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে কয়েকটি উপাদান থাকলে আইবিএস কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন, 
  1. শাকসবজি ও ফাইবার যুক্ত খাবার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা দরকার। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, তাদের জন্য এটি খুবই কার্যকর। 
  2. সহজপাচ্য খাবার খাওয়া। যাদের ঘন ঘন ডায়রিয়া হয়, তাদের জন্য বিষয়টি খুবই উপযোগী।
  3. পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খাওয়া প্রয়োজন 
  4. বদহজম হওয়া সংক্রান্ত টেনশন না করা। 
  5. পারলে রেড মিট এড়িয়ে চলা।
  6. সর্বোপরি, ফাস্টফুড এবং জাঙ্ক ফুড সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা।

মনে রাখতে হবে, 

  1. ওষুধের চেয়ে জীবন যাপন প্রণালীতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারলে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়
  2. এমন কোন একক ডায়েট বা ওষুধ নেই যা IBS এ আক্রান্ত প্রত্যেকের জন্য কাজ করে। 
  3. কিন্তু এমন অনেক কিছু আছে, যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে, যদি আপনি তা মেনে চলতে পারেন।

আইবিএস থেকে মুক্তির সাধারণ টিপস

✅ কী  করবেন

  1. আপনি যতটা পারেন তাজা উপাদান ব্যবহার করে ঘরে রান্না করা খাবার খাবেন,
  2. আপনি যা খাচ্ছেন এবং খাওয়ার পর যে উপসর্গ লক্ষ্য করছেন তা একটি ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করুন। এবার আপনার আইবিএসকে বৃদ্ধি করে এমন জিনিসগুলি এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন
  3. রিলাক্স করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন
  4. প্রচুর ব্যায়াম করুন
  5. কতটা সাহায্য করে, তা দেখতে এক মাসের জন্য প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক এর কম্বো ডোজ ব্যবহার করে দেখুন।
  6. ভালো কাজ হলে বিষয়টা তিন মাস কন্টিনিউ করুন।

❎ কী করবেন না

  1. খাবার খেতে দেরি করবেন না, বা খাবার এড়িয়ে খালি পেটে থাকবেন না,
  2. খুব তাড়াতাড়ি খাবেন না, সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে খান,
  3. প্রচুর চর্বিযুক্ত, মশলাদার বা প্রক্রিয়াজাত (ফাস্টফুড ও জাঙ্কফুড) খাবার খাবেন না,
  4. দিনে ৩ ভাগের বেশি তাজা ফল খাবেন না (একটি অংশ ৮০ গ্রাম),
  5. দিনে ৩ কাপের বেশি চা বা কফি পান করবেন না,
  6. প্রচুর অ্যালকোহল, ফিজি বা ঠান্ডা পানীয় (সফ্ট ড্রিংক) পান করবেন না

পেট ফোলা, খিঁচ ধরা এবং বায়ু ত্যাগ করা কমানোর উপায় :

  1. ওটস (যেমন পোরিজ) নিয়মিত খান
  2. দিনে ১ টেবিল চামচ তিসি (পুরো বা মাটি) খান
  3. হজম করা কঠিন এমন খাবার এড়িয়ে চলুন (যেমন বাঁধাকপি, ব্রকলি, ফুলকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, মটরশুটি, পেঁয়াজ এবং শুকনো ফল)
  4. সরবিটল নামক মিষ্টিযুক্ত পণ্যগুলি এড়িয়ে চলুন
  5. বুস্কোপ্যান বা পেপারমিন্ট তেলের মতো সাহায্য করতে পারে এমন ওষুধ সম্পর্কে একজন ফার্মাসিস্টকে জিজ্ঞাসা করুন
  6. ডায়রিয়া কমানোর জন্য উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার যেমন গোটা শস্য জাতীয় খাবার (যেমন ব্রাউন ব্রেড এবং ব্রাউন রাইস), বাদাম এবং বীজ কমিয়ে দিন
  7. সরবিটল নামক মিষ্টিযুক্ত পণ্যগুলি এড়িয়ে চলুন
  8. এবিষয়ে সাহায্য করতে পারে এমন ওষুধ সম্পর্কে ফার্মাসিস্টকে জিজ্ঞাসা করুন, যেমন ইমোডিয়াম (লোপেরামাইড)

গুরুত্বপূর্ণ

আপনি যদি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন, তবে ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন। অন্যদিকে আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য আক্রান্ত হন, পায়খানা নরম করতে প্রচুর পানি পান করুন। দ্রবণীয় ফাইবার আছে এমন খাবার খাওয়া বাড়ান - এই ধরণের খাবারের মধ্যে রয়েছে ওটস, ডাল, গাজর, খোসা ছাড়ানো আলু এবং তিসি ইত্যাদি।
--------xx-------

মন্তব্যসমূহ

রাজ্য, দেশ ও আন্তর্জাতিক খবর

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ