রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সুকৌশলে শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদন্ড ভেঙে দিতে চাইছে
রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সুকৌশলে শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদন্ড ভেঙে দিতে চাইছে। — সুদীপ্ত গুপ্ত
![]() |
রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সুকৌশলে শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদন্ড ভেঙে দিতে চাইছে |
কিন্তু কেন এই দিন দেখতে হচ্ছে তাঁদের, ভুগতে হচ্ছে সীমাহীন যন্ত্রণায়? এর দায়ই বা কার? এমনই একরাশ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা হল নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সাংগঠনিক সভা ২০২৫ -এ।
আজ ২৬/০৫/২০০৫ সোমবার বেলা ১১টা থেকে সভার কাজ শুরু হয় বারুইপুর পদ্মপুকুর কো-অর্ডিনেশন কমিটির জেলা ভবনে। এই সভায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় থেকে ১৫৩ জন সংগঠক যোগ দেন এবং ২৬ জন আলোচক আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা থেকে উঠে আসে সংগঠনের দূর্বলতা ও তা কাটিয়ে ওঠার নানা কৌশল ও কর্মসুচীর কথা।
এই সভা উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয় একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা, যার আলোচ্য বিষয় ছিল ‘সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সংকট ও আমাদের কর্তব্য’। প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি সুদীপ্ত গুপ্ত। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সহ-সভাপতি উজ্জ্বল চক্রবর্তী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় সভাপতিমন্ডলীর দ্বায়িত্ব পালন করেন, যথাক্রমে জেলা সভাপতি গৌতম ব্যানার্জি, রবীন রায়, গৌতম পাল এবং শুক্লা রায়।
‘সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সংকট ও আমাদের কর্তব্য’ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সাথি সুদীপ্ত গুপ্ত অভিযোগ করেন, “রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার পরিকল্পনা করে এবং সুকৌশলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদন্ড ভেঙে দিতে চাইছে।” তাঁর মতে, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, স্কুলছুট ছেলেমেয়ের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি, শিক্ষকদের বকেয়া ডি এ না দেওয়ার বাহানা —সবই এই কৌশলের ফসল। আর এগুলোই সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় সংকট ডেকে এনেছে।
তিনি দাবি করেন, “শিক্ষ ব্যবস্থায় কোন সংকট কোনদিন ছিল না --এ দাবি হয় তো করা যাবে না। কিন্তু অতীতে এমন ভয়ংকর সংকট কোনদিন দেখা যায়নি।” প্রসঙ্গত তিনি বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে শিক্ষা ব্যবস্থার গৌরবোজ্জ্বল ছবি তুলে ধরে বলেন, “স্বাক্ষরতা আন্দোলনের হাত ধরে পশ্চিমবাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় জোয়ার এছেছিল। আর সেকারণেই সারা বাংলা জুড়ে অসংখ্য ‘নিউ সেটআপ স্কুল' গড়ে তুলতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার।” একরাশ হতাশা নিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, “অথচ সেই বিদ্যালয়গুলো আজ বন্ধ হতে বসেছে।”
বস্তুতপক্ষে আজ বিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে শিক্ষা ব্যবস্থার এই কঙ্কালসার চেহারা লক্ষ করা যাচ্ছে বলে দাবি করেন, আলোচনায় অংশ নেওয়া একাধিক জোন, মহকুমা ও জেলা কমিটি থেকে আসা আলোচকগণ। শিক্ষকগন আজ আর শিক্ষক নন, তাঁরা সরকারের বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানকারী প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীতে পরিণত হয়ে গেছেন — দাবি করেন সুদীপ্ত গুপ্তে।
![]() |
১৫৩ জন সংগঠক যোগ দেন এবং ২৬ জন আলোচক আলোচনায় অংশ নেন |
এই পরিস্থিতিতে নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির দায়িত্ব কী? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন রাজ্য সভাপতি সুদীপ্ত গুপ্ত। তিনি অতীত ইতিহাস ঘেঁটে তার ব্যাখ্যা দেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা উত্তর দিনে সংগঠনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ব্যাখ্যা করে তিনি দাবি করেন, যুক্তফ্রন্ট সহ বামফ্রন্ট সরকারের উত্থানে এবং শিক্ষার অগ্রগতির চড়াই-উতরাইয়ে সমিতির গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকার কথা।
এপ্রসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের উদাহরণ টেনে তিনি শিক্ষকদের দাবিদাওয়া আদায়ে সমিতির ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আজ মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট যে ২৫% ডি এ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল ২০০৯ সালে বামফ্রন্ট সরকারের ‘রোপা আইনের’ মাধ্যমে। এই আইনের AICPI-কে সামনে রেখে আদালত রাজ্য সরকার ২৫% ডি এ দিতে বাধ্য বলে তাঁর রায়ে উল্লেখ করেছেন — বলেন সুদীপ্ত গুপ্ত।
আলোচনার শেষ পর্বে এসে সম্পাদক অনুপম রায় বলেন, আমাদের সংগঠনকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলতে হবে। মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে আমাদের কথা। তবেই শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের এই চক্রান্তকে রুখে দেওয়া যাবে। তিনি সবাইকে এই কাজে এগিয়ে আসা এবং আরও বেশি মানুষকে এই আন্দোলনে সামিল করার আহবান জানান।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন