ব্রণ হওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার
ব্রণ হওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার
![]() |
ব্রণ হওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার |
ব্রণ কেন হয়, কীভাবে এর প্রতিকার করা যায়?
Causes-of-acne-and-its-remedies
মুখের ত্বকে ব্রণ হয়নি, এমন মানুষ হাতে গোনা যায়। কিন্তু আমরা ক'জন জানি, এর কারণ কী? কীভাবেই বা এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? আসুন জেনে নেয়া যাক ব্রণ হওয়ার কারণ এবং কীভাবে তা প্রতিকার করা যায়।
ব্রণ কী?
ব্রণ আসলে মুখের ত্বকে হঠাৎই জেগে ওঠা এক ধরনের ফুসকুড়ি বা ফোড়ার মতো র্যাশ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় অ্যাকনি ভালগারিস। সাধারণত বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো কিশোর কিশোরীদের মুখে এই ধরনের র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়। তবে, কারো কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা দীর্ঘদিন থেকে যায়।
ব্রণ কেন হয়?
পরিসংখ্যান বলছে প্রতি ১০ জন কিশোর কিশোরীর মধ্যে আটজনই এই সমস্যায় ভোগে। মূলত বয়সন্ধিকালে এই সমস্যা প্রকট হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
- ত্বকের উপরে থাকা রোমকূপের নিচে থাকে একটি গ্লান্ড, যার বৈজ্ঞানিক নাম সিবাসিয়াস। এই গ্লান্ডের মধ্যে তৈরি হয় এক ধরনের তৈলাক্ত পদার্থ যার নাম সিবাম। সিবামের কাজ হল চুল ও ত্বকের মসৃণতা বজায় রাখা।
- কোন কারণে যদি এই গ্ল্যান্ডে উৎপন্ন সিবামের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হয়, এবং তা রোমকূপের ছিদ্রে আটকে যায় তবে তা ত্বকের মৃত কোষ ও ব্যাকটেরিয়া মিলে সংক্রমণ ঘটায়। ফলে ব্রণের জন্ম হয়।
- ত্বকের ছিদ্র আটকে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ত্বকের উপর জমে থাকা ময়লা। তাই ত্বক অপরিষ্কার রাখলে ব্রণের সমস্যা বাড়ে।
- স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় (লাইফস্টাইল) পরিবর্তনের ফলে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং হরমোনের ভারসাম্য হারিয়ে যায়। ফলে ‘অ্যাডাল্ট অনসেট অফ অ্যাকনি’ (এওএ) নামে এক ধরনের ব্রণ তৈরি হয় যা সহজে সারতে চায় না। এই ধরনের ব্রণও সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে হয়ে থাকে।
ব্রণ সম্পর্কে আধুনিক গবেষণা :
কিশোর বয়সে হওয়া ব্রণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনা আপনি সেরে যায়। তবে কখনো কখনো চিকিৎসকের শরণাপন্নও হতে হয়।
কিন্তু বড় বয়সের ব্রণের ক্ষেত্রে সমস্যাটা এত তাড়াতাড়ি মেটে না। ‘কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব মেডিসায়েন্স’-এ করা একটি গবেষণা পত্রে দেখা যাচ্ছে যে, ‘অ্যাডাল্ট অনসেট অফ অ্যাকনি’ যা মুখমণ্ডল কিংবা গালের বদলে থুতনি ও চোয়ালের নিচে, কাঁধে, বগলের পাশে কিংবা পিঠে তৈরি হয়, তা সহজে সারতে চায় না। এই গবেষণা পত্রটিতে বলা হয়েছে, এদের মধ্যে অধিকাংশই একটি বিষয় খুবই কমন এবং তা হল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজন।
১১২ জন রোগীর উপর সমীক্ষা করে তারা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। তারা বলছেন, ‘যাদের ওজোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি তাদের মধ্যেই অ্যাডাল্ট এখনই বেশি দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বেশি কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ও অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যাও।
ব্রণ সম্পর্কে চিকিৎসকদের পরামর্শ :
বিশিষ্ট ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক লাহেরিও এই গবেষণার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। তাঁর কথায়, “এই গোষ্ঠীর মধ্যেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অ্যাডাল্ট অনসেট অফ অ্যাকনি। এদের মধ্যে যাদের ওজন অত্যধিক বেশি, গায়ে বেশি লোম অথচ চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে কিংবা মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভাশয় সিস্ট থাকা অথবা অনিয়মিত ঋতুচক্র, তাদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায় বড় বয়সের ব্রণ।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ সুরজিৎ গড়াই। তাঁর ব্যাখ্যা হল, “ওজন অত্যধিক বেশি হলে শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। এর জেরেই হরমোনের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার নানা উপসর্গ ফুটে ওঠে শরীরে। যৌবনে কিংবা মধ্য বয়সে মুখে ব্রণ হওয়ার অন্যতম বড় কারণ এটিই।”
এই সমস্ত চিকিৎসকদের অভিমত হল, গত এক দেড় দশকে এই সমস্যাটা আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। লাইফস্টাইল সংক্রান্ত সমস্যা এবং বড় বেশি ওজনের ঝঞ্ঝাটের কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
সুতরাং তাদের পরামর্শ হল,
- ফাস্টফুড ও জাঙ্ক ফুড এর পাশাপাশি চিনি ও ময়দা জাতীয় খাবারও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন, বার্গার, নাগেট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, হটডগ, সোডা, মিল্কশেক-এর মত জাঙ্ক ফুড খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
- বেশি করে খেতে হবে জল, শাকসবজি ও ফল।
- রোজ নিয়ম করে কিছু সময় ব্যায়াম করতে হবে। কারণ, শরীর চর্চা নিয়মিত করা হলেই ওবেসিটি বা ওজন বৃদ্ধি জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
- প্রচুর মেকআপ ব্যবহার না করার বিষয়ে সতর্ক থাকা।
- খুব বেশি টেনযুক্ত ময়েশ্চারাইজার বা সানস্ক্রিন লোশন না ব্যবহার করা।
- দিনে এক থেকে দুবারের বেশি ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যাবেনা ।
- হেয়ার স্প্রে বা জেল এড়িয়ে চলতে হবে।
- মুখে ঘাম বসতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- সর্বোপরি, মানসিক চাপমুক্ত থাকার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
ব্রণ সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা :
ব্রণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কিছু ভুল ধারণা লক্ষ্য করা যায়। তারা মনে করেন,
- সব ব্রণেই আপনা আপনি সেরে যায়। মনে রাখতে হবে, বয়ঃসন্ধিকালে তৈরি হওয়া অধিকাংশ ব্রণ একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চললেই সেরে যায়। কিন্তু বড় বয়সের ব্রণ সাধারণত এভাবে সারে না।
- পেটের রোগ বিশেষ করে লিভারের দোষ কিংবা পেট পরিষ্কার না হলে ব্রণ জনিত সমস্যা হয়। মনে রাখতে হবে, এসব কথা আর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
- যেকোনো ক্রিম লাগালেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মনে রাখা জরুরি, চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে এ ধরনের কোন ক্রিম ত্বকে না ব্যবহার করাই উচিত। কারণ অতিরিক্ত স্টেরয়েড আছে এমন ক্রিম ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। যেমন, মুখের ত্বক পাতলা হয়ে যেতে পারে, ত্বকে কালো দাগ তৈরি হতে পারে, মুখে অবাঞ্চিত চুল গজাতে পারে।
ব্রণ হলে কী করনীয়?
ব্রণ হওয়ার আগে কী করণীয় তা আগেই বলা হয়েছে। ব্রণ হওয়ার পরে যেগুলো মনে রাখা দরকার তাহলে —
প্রথমত, উপরে চিকিৎসকের পরামর্শ বিষয়ে যে কথাগুলো বলা হয়েছে সেগুলো মেনে চলা জরুরি।
দ্বিতীয়ত, ব্রণ হওয়ার পর যদি তা সহজে না সারে এবং বারে বারে তা হতে থাকে, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন