সর্বশেষ গুরুত্বপুর্ণ খবর

২০০ বছরে বিদ্যাসাগর’, চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উঠে এল বিদ্যাসাগরের প্রাসঙ্গিকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবর্ষ উপলক্ষ্য করে অনলাইনে ‘২০০ বছরে বিদ্যাসাগর’ শীর্ষক শিরোনামে মুক্ত আসর ও বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটি আায়োজন করে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। উল্লেখ্য,২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে এবং প্রধান অতিথির উপস্থিতে সম্মেলনটি উদ্বোধন করেন ভারতের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও গবেষক অধ্যাপক পবিত্র সরকার।

রোববার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সন্ধ্যায় ৭টায় সমাপনী অনুষ্ঠান মাধ্যমে চারদিনের এই সম্মেলন শেষ হয়। বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতি সেলিনা হোসনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক।
আনিসুল হক বলেন, ‘বিদ্যাসাগরের ঋণ আমাদের কাছে আছে। তিনি নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা কর্তব্যবোধের পরিচয় দিয়েছেন। ২০০ বছরে পর বিদ্যাসাগরকে স্মরণ করছি। এর দ্বারা প্রমানিত হয় তিনি কত বড় ও মহান মানুষ ছিলেন। বিদ্যাসাগরের চর্চার মাধ্যমে জানা, বুঝার পড়ার এক বিস্তারিত জগৎ খুলে যায়। ইতিহাসের আলোকে বর্তমানকে মোকাবেলা করতে হবে। বিদ্যাসাগরে কাজগুলো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। বিদ্যাসাগর অনেক বড় একজন বিপ্লবী ছিলেন। তিনি আমাদের মনের মধ্যে পরিবর্তনের সূচনা করতে যে আগুনটা দরকার সেই আগুনটা জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের মনের বিপ্লবী।’

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আজকের দিনে বাংলাদেশে যেভাবে নারীরা নির্যাতিত, ধর্ষিতা হচ্ছে, শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে এই জায়গায়টি আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরে মতো সবাইকে যদি পাশে পাই তাহলে সুস্থ, সুন্দর, অনেক গৌরবময় করে তুলতে পারব। আমরা মনে করি, আমাদের চেতনার আলোয় আলোকিত হবে আমাদের প্রজন্ম।’

বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ কে এম শাহনাওয়াজ বলেন, ‘চমৎকার ও সুসম্পন্নভাবে শেষ হলো ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আর্ন্তজাতিক সম্মেলন। সবাইকে অসংখ্যা কৃতজ্ঞতা জানাই।’

বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবেদা সুলতানা বলেন, ‘২০০ বছরে আগের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্ম নিলেও আজও তিনি আমাদের প্রাসাঙ্গিক। তাঁর রেখে যাওয়া কাজগুলো আমরা পালন করছি। সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য নারীদের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। এটা বিদ্যাসাগর অনুধাবন করেছিলেন বলে তিনি নারী শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বিদ্যাসাগর আমাদের দেখি দিয়েছেন বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ বিষয়টি। বিদ্যাসাগরের দেখানো পথে আমরা এগিয়ে যাব।’

ভারতের উদার প্রকাশক প্রকাশনের প্রকাশক ও সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কেন নারী শিক্ষার উপর জোর দিয়েছিলেন তা আমরা ভারতে গবেষণা করে দেখিছি। যে পরিবারে একজন মা মাধ্যমিক পাস করেছেন সেই পরিবারে অধিকাংশ ছেলে মেয়েরা উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছে। মা যদি শিক্ষিত হয় সমাজ আলোকিত হয়। নারী শিক্ষার প্রসার–প্রচার এখনো প্রয়োজন আছে। বিদ্যাসাগর যে নারী শিক্ষা কথা বলেছেন সেটার উপর জোর দিতে হবে। বিদ্যাসাগর সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য কাজ করেছিলেন। মনুষ্যত্ব জাগরণের অগ্রনায়ক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।’

এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য চিকিৎসক আহমেদ হেলাল, প্রশিক্ষক কাজী সামিও শীশ, সাধারণ সম্পাদক ও মুক্ত আসরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবু সাঈদ, ভারতের প্রকাশনার সংস্থা উদার আকাশের প্রকাশ ও সম্পাদক ফারুক আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সাইফুল্লাহ সাদেক, ট্রাভেলেটস অফ বাংলাদেশ সহসাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস শুভাসহ প্রমূখ।

চার দিনের এই সম্মেলনে ৩টি দেশ থেকে ১১ জন খ্যাতিমান গবেষক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিকরা অংশ নিচ্ছেন। অনুষ্ঠানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উপরে গুরুত্বপূর্ণ ১১টি বিষয়ের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপনা করা হয়।

মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রাপ্তন অধ্যাপক ধর্মদাস ঘোষ। চারদিনের এই আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে প্রবন্ধ পাঠ করেন ভারতের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ সাহিত্যিক ও গবেষক পবিত্র সরকার, গবেষক ও লেখক ড. অমিয় কুমার সামন্ত, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. রাজকুমার কুঠারী, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্তন অধ্যাপক ড. বরুণ কুমার চক্রবর্তী, গবেষক বিনয় কুমার রায়চৌধুরী, যুক্তরাজ্যে থেকে কবি শামীম আজাদ, গবেষক মোহাম্মদ আবদুল হাই, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ রেজাউল করিম ও মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. কুদরদ–ই–হুদা।

২০০ বছরে বিদ্যাসাগর শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সহযোগিতায় স্বপ্ন '৭১ প্রকাশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ, ট্রাভেলেটস অফ বাংলাদেশ, উদার আকাশ ও সিনু ।

Comments