এসএসসি : অনশনের ২৮ দিন, অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস।

সঞ্চারি পুরকাইত, কলকাতা : খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বেশ জোরগলায় একটি জনসভায় বলেছিলেন, শিক্ষাদপ্তরে ঘুঘুর বাসা হয়েছে।সেইকথার সত্যতার প্রমাণ কেউ চায়নি। কারণ ততদিনে শিক্ষকবদলি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি বেশ চাউর হয়ে গেছে। বরং এটা ক্রমশ গা সওয়া ব্যাপার হয়ে যাচ্ছিল যে, যেকোনও দাপ্তরিক কাজে পিছনের অন্যায় পথে যাওয়াটাই যেন নিয়ম। এযেন সেই উলঙ্গ রাজাকে দেখে বাহবা বাহবা বলা।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজ্য উত্তাল হয়েছে যে বিষয়টি নিয়ে তা হল, এস এস সির নিয়োগের ২০১৬ সালের যে প্রথম এস এল এস টি পরীক্ষা হয়েছিল, তাতে নিয়োগে নিয়ম মানা হচ্ছে না এমনটা দাবি নিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় চারশো আবেদনকারীর অনশন। এই আবেদনকারীরা স্কুল সার্ভিস কমিশন দপ্তরে বহু আবেদন জানানোর পর বাধ্য হয়ে কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনে বসেন।

এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের অনশনকারীদের স্পষ্ট বক্তব্য কলকাতা গেজেটে প্রকাশিত নিয়ম না মানার ফলেই তারা ওয়েটিং লিস্টের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যেখানে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং অ্যাকাডেমিকে প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করে মেরিট লিস্ট বানানোর কথা, সেখানে এর কোনোটাই করা হয়নি।চাকরির দাবিতে তাই তাঁরা আমরণ অনশনের পথ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন, এমনটাই বক্তব্য তাঁদের।

অনশন ২৮ দিনে পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় একশো আবেদনকারী অসুস্থ হয়েছেন। দুজন অনশনকারীর ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গেছে। বহু প্রার্থীর চর্মরোগ, ইউরিন ইনফেকশনসহ বহু রোগ দেখা দিয়েছে।টয়লেটের সমস্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেওকিন্তু তাঁরা বক্তব্যে অনড়।
১. স্কুল সার্ভিস কমিশনের গেজেট মেনে ১:১.৪ রেশিওতে ইন্টারভিউ হয়নি।
২. চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রকাশের ১৫ দিন আগের ভ্যাকান্সি আপডেট হয়নি, নিয়মমতে যেটা হওয়ার কথা।

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বারবার আলোচনাও ব্যর্থ হয়ে গেছে। শেষপর্যন্ত শিক্ষাদপ্তর স্কুলশিক্ষা সচিব মনীশ জৈন, এসএসসি চেয়ারময়ান সৌমিত্র সরকারসহ পাঁচ সদস্যের একটি কমিশনকে এই বিষটি দেখার দায়িত্ব দিয়েছে। আজ বুধবার অনশনকারীদের পক্ষ থেকে কমিশনে একটি দাবিসনদ জমা দেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে প্রায় বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। বাম শিক্ষক-ছাত্র-যুব সংগঠনগুলিও অনশনকারীদের আবেদনে সংহতি জানিয়েছে। অনশনের প্রায় ২৮ দিন কেটে গেলেও সারা রাজ্যের মানুষ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

অবশেষে ২৮ তম দিনের সন্ধ্যায় মুখমন্ত্রী এসে অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কথায় নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকায়, মৌখিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছু সম্ভব নয়। নির্বাচনের আগে এই প্রতিশ্রুতির ওপরে অনশনকারীরা কতটা ভরসা রাখতে পারবেন, এখন সেটাই দেখার।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

Facebook