সর্বশেষ গুরুত্বপুর্ণ খবর

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্তনিগম আয়োজিত মিলন উৎসব ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্তনিগম আয়োজিত মিলন উৎসব ২০২৪ : উদ্বোধনে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্তনিগম আয়োজিত মিলন উৎসব ২০২৪ : উদ্বোধনে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্তনিগম আয়োজিত মিলন উৎসব ২০২৪

ফারুক আহমেদ

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় প্রতি বছরের ন্যায় এবছরেও পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্তনিগম মিলন উৎসবের আয়োজন করেছে, যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪। পার্ক সার্কাস ময়দানে আয়োজিত এই মিলন উৎসব চলবে ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত।

বৈচিত্রের মাঝে এই মহামিলন উৎসবের শুভ সূচনা করলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী জনাব ফিরহাদ হাকিম। বিশেষ অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী জনাব সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, মাননীয়া মন্ত্রী মোহতারমা ইয়াসমিন সাবিনা, মাননীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, সাংসদ জনাব নাদিমুল হক ও প্রাক্তন সাংসদ জনাব আহমেদ হাসান ইমরান। এছাড়াও ছিলেন জনাব মহঃ গুলাম আলি আনসারি, আইএএস পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সচিব, সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং ড. পি বি সেলিম চেয়ারম্যান, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম, এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অনান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের উদ্যোগে ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩.৮৯ কোটি স্কলারশিপ প্রদান করা হয়েছে প্রায় ৭৮০০ সাত হাজার আটশো কোটি টাকা অর্থমূল্য। এবছর ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্টল বিশেষ আকর্ষণে থাকছে। সেনাবাহিনীর চাকরি পেতে নানান সুযোগ সুবিধা জানতে যুবকদের ভিড় চোখে পড়ছে সেনাবাহিনীর স্টলে। জোর দেওয়া হয়েছে কেরিয়ার কাউন্সেলিংয়ের উপর।

পার্কসার্কাস ময়দানে বৈচিত্রের মাঝে মহামিলনের উৎসব শুভ সূচনা হল ২৭ জানুয়ারি শনিবার।

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান দক্ষ আধিকারিক ড. পি বি সেলিম (আইএএস.)-এর নেতৃত্বে মিলন উৎসব ২০২৪ বিগত বছরগুলোর মতোই এবছরও আবেগ-আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর ভালবাসায় শামিল হলেন হাজার হাজার মানুষ। সর্ব শ্রেণির মানুষের কল্যাণে এই উৎসবের পরিপূর্ণ পরিকল্পনা ও সার্থক আয়োজন দেখে মুগ্ধ হলেন সবাই। ড. পি বি সেলিম-এর ঐকান্তিক ও সফল প্রচেষ্টায় মিলন উৎসব বাংলার মননের আকাশে ইতিপূর্বেই বিশেষ দাগ কেটেছে। এবছর পার্কসার্কাস ময়দানে মিলন উৎসব ডাক দিল ঘরে ঘরে ঐকতান আর সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে যাক।

এই মহামিলনের মূল উদ্দেশ্য কারিগর (Artisan) ও বেনিফিসিয়ারিদের তৈরি পণ্যের মার্কেটিং-এর ব্যবস্থা করা এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদের ও অনলাইন বিক্রির সঙ্গে একটা যোগাযোগের ব্যবস্থা করে তাদের তৈরি জিনিসের বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা যাতে তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে। বিত্তনিগম শুধুমাত্র লোনপ্রদান করে না, এছাড়াও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রদান করা হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ যা প্রথম শ্রেণি থেকে পি এইচ ডি পর্যন্ত পাঠরত ছাত্রছাত্রীরা পেয়ে থাকে। এই ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের সূচনা ঘটে ২০১৯ সালে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে। প্রথম বছরেই ৩৭.৫ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী এই স্কলারশিপ পেয়েছিল যা সারা ভারতবর্ষের একটি বিস্ময়কর ঘটনা। গত বছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ এ প্রায় ৪৫ লক্ষ স্কলারশিপের আবেদন জমা পড়েছিল। তার মধ্যে প্রায় ৪২ লক্ষ স্কলারশিপ বিতরণ করা হয়েছে, এবং যার অর্থমূল্য আনুমানিক ১০০০ কোটি টাকার বেশি। এই স্কলারশিপের পুরোটাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার বহন করে। এ বছরেও অর্থাৎ ২০২৩-২৪ এ স্কলারশিপ প্রকল্পে প্রায় ৪২ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৫ লক্ষ স্কলারশিপ প্রদান করা হয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রত্যেক বছর প্রায় ১১০০ ব্যক্তি ঋণ ও প্রায় এক লক্ষ স্বনির্ভর দলের সদস্যদের ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে।

মিলন উৎসবে এবছরে বিশেষ আকর্ষণে থাকছে গতবছরের মতো জবফেয়ার, শিক্ষা সচেতনতা শিবির, চাকরির জন্য কেরিয়ার কাউন্সেলিং, উৎপাদিত দ্রব্যের প্রদর্শন ও বিক্রয়, মেডিক্যাল প্যাভিলিয়নে স্বাস্থ্য পরীক্ষার শিবির এবং থাকছে বিজ্ঞান প্রদর্শনী। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় ২৫০-এর অধিক স্টল।

মেডিক্যাল প্যাভিলিয়নে পরিষেবা প্রদান করবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত মেডিক্যাল ইউনিট, বিভিন্ন হসপিটালের মিলিত উদ্যোগে মিলন উৎসবের মেডিক্যাল প্যাভিলিয়নে ২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারি স্বাস্থ্যপরীক্ষার শিবিরে থাকবেন রাজ্যের নামকরা বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তার, যাঁরা সুচিকিৎসা, পরামর্শ ও পরিষেবা দিয়ে মানুষের সাহায্য করবেন। ৩০ জানুয়ারি ২০২৪-এ অ্যাপ্রেন্টিস-কাম-জব ফেয়ারের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ৮ হাজার কর্মপ্রার্থী উপস্থিত হতে পারে।

বাংলার বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজস্ব হস্তশিল্পর প্রদর্শনী, নিজস্ব কুটিরশিল্প, খাবারদাবার, ফুডজোন, হাতের তৈরি নানানশিল্পের প্রদর্শন ও বিক্রির বিশেষ আয়োজন ছাড়াও প্রতিদিন থাকছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাবে।

সারা মেলা জুড়ে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্তনিগমের সুবিধাভোগীদের তৈরি নানা ধরনের অলঙ্কার, পোশাক প্রদর্শিত হবে এবং পিঠে-পুলি ও অনান্য খাদ্যদ্রব্য বিক্রি হবে বিভিন্ন স্টলে। আশা করা যায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের স্বতঃপ্রণোদিত সমাগমে এই পাঁচ দিনব্যাপী মিলন উৎসব আকর্ষণীয় ও সাফল্যমণ্ডিত হয়ে উঠবে।

মিলন উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য ফ্রি কেরিয়ার কাউন্সেলিং এবং তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের সাইবার সিকিউরিটি অফ এক্সেলেন্স-এর তত্ত্বাবধানে সাইবার অভিযোজন ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা।

গত বছরের মতো এবছরও, বিভিন্ন এনজিওদের নিয়ে একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এনজিওগুলির প্রতিনিধিবৃন্দ আরও বেশি করে মানুষকে সরকারি পরিষেবা দিতে পারেন।

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিস্তুনিগম আয়োজিত এই মিলন উৎসব হল জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের মিলন প্রাঙ্গণ।

মিলন উৎসবে সকলকে সাদর আমন্ত্রণ জানালেন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান দক্ষ আধিকারিক ড. পি বি সেলিম ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাকিল আহমেদ।
মিলন উৎসবে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ফ্রি কেরিয়ার কাউন্সেলিং এবং বেকারদের চাকরি দেওয়ার সুপরামর্শ।

খ্রিস্টান, মুসলিম, বৌদ্ধ, জৈন প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোকেরা আলাদা আলাদা দিনে নিজেদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করবেন।

গত বছর ভিড় হয়েছিল বিদেশে পড়তে যাওয়ার খোঁজ নিতে। বিশেষ করে মেডিক্যাল শিক্ষার কোথায় কী সুযোগ সুবিধা আছে তা জানার আগ্রহও দেখা গিয়েছিল।

সারা মেলা জুড়ে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের সুবিধাভোগীদের তৈরি নানা ধরনের অলঙ্কার, পোশাক প্রদর্শন ও পিঠে-পুলি বিক্রি হবে বিভিন্ন স্টলে। এই পাঁচদিনেই মিলন উৎসব জমে উঠবে এবং মানুষের উৎসহ চোখে পড়বে, জানালেন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাকিল আহমেদ।

Comments